সোনাইছড়ির মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রিপা: তার সংগ্রামের পিছনের গল্প!


ইমরান আল মাহমুদ:

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামে অভাব অনটনের সংসার জালাল আহমদের। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে শাহেদা আক্তার রিপা বাড়ির পাশের মাঠে ছেলে ফুটবলারদের সাথে নিয়মিত অনুশীলন করে ধীরে ধীরে ‘মেসি’ নামে পরিচিত হয়ে উঠে।

তার প্রতিভা দেখে স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবক শামসুল আলম সোহাগ ভর্তি করিয়ে দেন বিকেএসপি তে। ক্রীড়াবিদ সানা উল্লাহর পরামর্শে সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করে রিপা কে ক্রীড়াপ্রেমী করে তুলেন তিনি।

রিপা’র বেড়ে উঠার গল্প টা কিরকম ছিলো?
রিপার বাবা: রিপা যখন স্কুলে পড়ছিলো তখন থেকেই খেলার প্রতি আগ্রহী ছিলো। কিন্তু পরিবারের অভাব অনটন থাকা সত্ত্বেও তার প্রতিভার কারণে খেলা ছেড়ে আসেনি কখনো। তার অপ্রতিরোধ্য গতির সহায়ক হিসেবে স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবক শামসুল আলম সোহাগ, ক্রীড়াবিদ সানা উল্লাহ ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় উপজেলা ভিত্তিক একটি টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। সেখান থেকে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে জেলা ফুটবল দলে জায়গা হয়। সেখান থেকে সবার সহযোগিতায় ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ হয় রিপার।

আপনার মেয়ের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জনে কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
রিপা’র বাবা: আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমার মেয়ে রিপা যিনি ছেলেদের মতো নৈপুণ্য দেখিয়ে নিজের সেরা অবস্থান ধরে রেখেছেন। আমরা অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত। এ আনন্দ শুধু আমাদের পরিবারের নয়,পুরো জালিয়াপালং, উখিয়া তথা কক্সবাজারবাসীর। যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আপনার পক্ষ থেকে কি বার্তা আছে?
রিপা’র বাবা: আমি একজন দিনমজুর ছিলাম। কাজকর্ম করে সংসার চালাতাম। রিপা’র অসামান্য অবদানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে ১০লক্ষ টাকা প্রদান করেছিলো। এর পরে নিজের বাড়িটা তৈরি করি। ক্রীড়াক্ষেত্রে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

রিপা’র বেড়ে উঠার পেছনের গল্প টা আসলে কি ছিলো?
শামসুল আলম সোহাগ:
জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের জালাল আহমদের অভাব অনটনের সংসারে বেড়ে উঠা রিপা প্রথম বঙ্গমাতা মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে নৈপুণ্যতা অর্জন করে। রিপা’র ডিবলিং ছিলো একজন পরিপূর্ণ খেলোয়াড়ের মতো নিখুঁত। তার এ প্রতিভা দেখে বিকেএসপির ফুটবলে ট্রায়াল দেওয়ার সুযোগ করে দিই। পরে সেখানে প্রথম স্থান অর্জন করে দেশের ফুটবল কে আলোকিত করার পথ সুগম হয়। মেসি খ্যাত শাহেদা আক্তার রিপা ভারতের একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে প্রথম ৪০ সেকেন্ডে গোল করে বিশ্ব ফুটবলে তাক লাগিয়ে দেয়। ভারত থেকে আসার পর বাংলাদেশের বিকেএসপি’র মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার হয়ে উঠেন রিপা।

আপনি একজন রিপা’র অভিভাবকের মতো ছিলেন,তার নৈপুণ্যে কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
শামসুল আলম সোহাগ: বিশ্ব ফুটবলে তাক লাগানো কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মেয়ে রিপা’র নৈপুণ্যে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। তার এতটুকু আসার প্রথম থেকে ক্রীড়াবিদ সানা উল্লাহ ও আমি সহযোগিতা করতে পরে নিজেদের ধন্য মনে করছি। রিপা’র উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।

(আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ)
শামসুল আলম সোহাগ: আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ